কুইন অব হার্টস

কুইন অব হার্টস

রবিন জামান খান

বিশিষ্ট শিল্পপতি মাহবুব সাহেব অত্যন্ত বিষ্ময়ের সাথে তার সামনে বসা মানুষটির খাওয়া দেখছেন আর চামচটা অল্পঅল্প নাড়ছেন। লোকটা একমনে খেয়ে চলেছে। অন্য কোনোদিকে মনোযোগ নেই। সে খাচ্ছে আর মাহবুব সাহেবের সাথে হালকা পাতলা কথা বলছে। তবে একটা কথাও তাদের কাজের প্রসঙ্গে না, সবই আলতু ফালতু কথা।

“মি. মাহবুব আপনি তো একদম খাচ্ছেন না। নিন এই চিংড়িটা খেয়ে দেখুন। এরা গলদা চিংড়িটা যা রাঁধে না…উফফফ মধু মধুু, নিন,” বলে সে নিজেই একটা বড়সড় চিংড়ি মাহবুব সাহেবের প্লেটে তুলে দিলো।

“ঠিক আছে, ঠিক আছে। আপনি খান,” মাহবুব সাহেব ভদ্রতাবসত কথাটা বললেন, যদিও খাবারের বিলটা উনিই পে করছেন।

“হ্যা অবশ্যই, আমি তো খাচ্ছিই, কিন্তু আপনার গেস্ট হিসেব আমার একটা দায়িত্ব আছে না ,” বলে লোকটা দাঁত কেলিয়ে হাসলো।

শালার গেস্ট! মাই ফুট!

“তো মি…সরি আপনার নামটা যেনো কী বলেছিলেন? ” মাহবুব সাহেব কাঁটা চামচটা প্লেটের একপাশে রেখে জানতে চাইলেন।

“কই বলিনি তো।”

“জ্বি?

“বলছি আমি আমার কোনো নাম বলিনি। আর যদি বলেও থাকি সেটা ছদ্মনাম হবে।”

“হুমমম সেটাই।”

“ঠিক ধরেছেন, আরে আপনি দেখি আবার খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কোয়েলের রোস্টটা চেখে দেখতে পারেন,” বলে লোকটা আবার রোস্ট করা একটা কেয়েল পাখি মি. মাহবুবের প্লেটে তুলে দিতে উদ্যত হতে মাহবুব সাহেব আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না।

উনি বেশ ঝাঁঝের সাথেই বলে উঠলেন, “দেখুন মিস্টার হোয়াটএভার ইউর নেইম ইজ। আমরা এখানে এসেছি একটা কাজে। আর আপনাকে একটা সত্যি কথা বলি…ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ। আপনাকে আমার মোটেও প্রফেশনাল… এই পর্যন্ত বলে বলে মি. মাহবুব চকিতে একবার আশেপাশে তাকালেন। তারা রেস্তোরাটার এক কোনায় বসেছে। জায়গাটা শেড দিয়ে সামান্য আড়াল করা। ওয়েটারও বেশ দূরে। “…কিলার ব’লে মনে হচ্ছে না।”

মি. মাহবুবের কথা শুনে লোকটা খাওয়া বন্ধ করে বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলো। চামচ আর ছুরিটা একপাশে রেখে ন্যাপকিন দিয়ে মুখ মুছে সোজা তাকালো মি. মাহবুবের চোখের দিকে। এই প্রথমবার মাহবুব সাহেবের মনে হল উনি এতোক্ষণ যা ভাবছিলেন তা সত্যি নয়। ঠান্ডা কালো চোখের মণির দিকে তাকিয়ে ভয়ে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। লোকটার দৃষ্টি একদম শীতল, পরিষ্কার ভাবলেশহীন খুনির চোখ।

লোকটা মি. মাহবুবরে চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে উঠলো, “তাই নাকি মি. মাহবুব? আমি একহাজার একটা কৌশল প্রয়োগে আপনাকে বুঝিয়ে দিতে পারি আপনার ধারণা ভুল। তবে আমি কোনোটাই করবো না। শুধু আপনাকে একটা ছোট্ট কাজ করতে বলবো। টেবিলের পাশে স্টিলের যে ঢাকনাটা রাখা আছে ওটা একটু তুলবেন প্লিজ। সাবধানে, ঢাকনাটা আবার ফেলে দিবেন না।”

মি. মাহবুব যন্ত্র চালিতের মতো তাই করলেন। লোকটা সাবধান করে না দিলে সত্যিই বোধহয় ওটা ফেলে দিতেন উনি। স্টিলের ঢাকনাটা একটু তুলতেই পরিষ্কার দেখতে পেলেন ওটার নিচে একটা পিস্তল রাখা। কালো রঙের পিস্তলটার মুখে লম্বা একটা সাইলেন্সার লাগানো। মাহবুব সাহেব ধপ করে ঢাকনাটা প্রায় ছেড়ে দিলেন।

“এবার বিশ্বাস হলো মি. মাহবুব? বলে সে আবার চামচ তুলে নিলো।

মাহবুব সাহেব অনুভব কররেন তার শিড়দাড়া বেয়ে ঠান্ডা একটা ঘামের ¯্রােত নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।

ঘটনাটার শুরু প্রায় মাসখানেক আগে। সিঙ্গাপুর থেকে একটা ট্যুর দুইদিন আগে শেষ ক’রে বিনা নোটিশে বাড়ি ফিরে আসা মি. মাহবুব হঠাৎ করে তার বাসায় ঢুকে বেডরুমে অচেনা একটা চুরুটের গন্ধ আবিষ্কার করেন। তার স্ত্রী কখনোই আদর্শ স্ত্রী ছিলো না। তবে সে যে খুব সিরিয়াস পরকীয়া জাতীয় কিছু একটার সঙ্গে জড়িয়েছে এ ব্যাপারে উনি নিশ্চিত হন। তারপর একটু সন্দেহ আর আরেকটু সচেনতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ব্যাপারটা নিশ্চিত হয়ে মুখোমুখি হন স্ত্রীর। আশ্চর্যের বিষয় তার স্বতী স্বাধ্বী স্ত্রী ব্যাপারটা অস্বীকার তো করলোই না বরং বেশ গর্বের সাথেই সেটা স্বীকার করে। সেই সাথে এও বলে মাহবুব সাহেবের তাকে ডিভোর্স দিতে হবে না, সে নিজেই মাহবুব সাহেবকে ডিভোর্স দিবে এবং সেই সাথে মাহবুব সাহেব শ্বশুরবাড়ির সূত্রে যে বিশাল ব্যাবসার মালিক হয়েছেন সেই ব্যবসার ফিফটি পার্সেন্ট তাকে ডিভোর্সের সাথে সাথে বুঝিয়ে দিতে হবে।

এই কথা শুনে বিশিষ্ট শিল্পপতি মাহবুব সাহেব স্ত্রীর বেঈমানিতে যতোটা না কষ্ট পান তারচেয়ে বেশি কুত্তাপাগল হয়ে যান ব্যাবসা হারানোর ভয়ে। হোক শ্বশুরবাড়ির সূত্রে কিন্তু নিজে তিলে তিলে কষ্ট করে যে সাম্রাজ্য উনি গড়েছেন তা হারানোর ভয়ে রাতের ঘুম আর দিনের কাজ হারাম হযে যায় তার। দীর্ঘদিন অন্তরজ্বালায় পুড়ে মাহবুব সাহেব যখন দিশেহারা দেখছেন তখন গতকাল অফিসে ডেকে পাঠান তার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক পার্টনার এবং বন্ধু আলমকে। এর আগে এইরকম গুরুতর মুহূর্তে আলমই সবসময় তার পাশে থেকেছে এবং কোনো না কোনো সমাধান বের করে এনেছে । মাহবুব সাহেবের আশা এবারও আলম তাকে নিরাশ করবে না।

গতকাল আলম অফিসে আসা মাত্রই উনি সেক্রেটারিকে ইন্টারকমে বলেন তাকে ভেতরে পাঠিয়ে দিতে। সব শুনে এবারও আলম তাকে হতাশ করলো না । তবে আলম তাকে যে সমাধান দিলো তাতে মাহবুব সাহেবের  টেনশন গেলো আরো বেড়ে।

“শেষ করে দাও,” আলম অনেকটা আনমনেই বলে ওঠে।

“মানে?” মাহবুব সাহেব কাপ থেকে খানিকটা কফি ছলকে ফেলেন।

“বলছি শেষ করে দাও। এই ঝামেলার জড় না উপড়ালে যতো দিন যাবে এটা আরো বড় হবে। তারচেয়ে খতম করে দাও, ঝামেলা মিটে যাবে।”

“কী বলছো তুমি? তোমার মাথা ঠিক আছে তো?

“ঠিক আছে দেখেই তো বলছি। আর তুমি এমন ভাব করছো যেনো এই কাজ আমরা প্রথমবার করছি।”

“না তা না, তাই ব’লে…।”

“হ্যা, এটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। এর আগে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আমি তোমার হয়ে সব করেছি। এবার তোমাকেই করতে হবে। তবে আমি সব ঠিক করে দেবো। আমার পরিচিত খুব ভালো এক লোক আছে। একবারে প্রফেশনাল যাকে বলে। সে এমনভাবে খুনটা করবে মনে হবে হয় সুইসাইড অথবা এক্সিডেন্ট। শোনো আমি ওকে বলে দেবো, সে ই তোমার সাথে যোগাযোগ করবে। সে সাধারণত কোনো রেস্টুরেন্টে দেখা করে। পাবলিক প্লেসে। এটাই তার কাজের ধরণ। তুমি আমাকে আর ফোন করোনা। আমি সব ঠিক করে তোমাকে ফোন করে জানাবো আর ওকে তোমার নম্বর দিয়ে দেবো। সে ই যোগাযোগ করে নেবে।”

তারপর কথামতোই কাজ হয়। চিন্তায় ডুবে থাকা মাহবুব সাহেব আজ সকালে খুনির ফোন পান। সে তাকে ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডের একটা রেস্টুরেন্টে ২টায় দেখা করতে বলে। জায়গাটা তার অফিসের একদম কাছেই বলা যায়। মাহবুব সাহেব সময়ের একটু আগেই চলে এসে খুনির কথা অনুযায়ী শেড দিয়ে আড়াল করা এক কোনার একটা টেবিলে বসেন। ঠিক দুইটায় লোকটা আসে। লোক বলা কি ঠিক হবে। ছেলে আর লোকের মাঝামাঝি বয়স। তাদের গ্রাম এলাকার ভাষায় যাকে বলে ‘ছেরাব্যাটা’ টাইপের। পরনে গ্যাবাডিন প্যান্ট আর কালো পোলো টি-শার্ট। চোখে চশমা। সহজেই মনে হবে কোনো ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট।

লোকটা এসে বেশ আন্তরিকতার সাথে কথা বলা শুরু করে। নিজেই সবচেয়ে ভালো আর দামি খাবারের অর্ডার দিয়ে খওয়া শুরু করে দেয়। মি.মাহবুবের মনে হতে থাকে লোকটা খুনি না, একটা ভাড়। কিন্তু এইমাত্র যা ঘটে গেলো তাতে ক’রে আর এরকম ভাবার উপায় নেই।

হায় খোদা! লোকটা পিস্তলটা ঢাকনার নিচে রাখলো কখন?

“মি. মাহবুব? লোকটা বলে উঠলো। তার ডাক শুনে মাহবুব সাহেব খানিকটা চমকে উঠলেন। “সরি আপনি মনে হয় মালটা দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেছেন।”

মাহবুব সাহেব দুইবার মুখ খুললেন কিছু বলবেন বলে কিন্তু আওয়াজ বেরুলো না।

“সরি।”

“কি?” অবশেষে মাহবুব সাহেব কিছু একটা বলতে পারলেন।

“বলছিলাম সরি, ইফ আই হ্যাভ বিন সো অফেন্সিভ, আই অ্যাম সরি। কিন্তু যেকোনো ব্যবসায় ক্লায়েন্টের ভরসা অর্জন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ব্যাবসায়ি, আপনাকে আমি আর কী বলবো। আপনি তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছিলেন না। তাই ওটা দেখিয়ে আপনার খানিকটা ভরসা অর্জন করলাম।”

“ই ই ইসট্ ওকে।”

“যাক আপনার মুখ দিয়ে ইংরেজি যেহেতু বেরুচ্ছে তারমানে আপনি ঠিক আছেন। এবার বলুন আপনার স্ত্রীকে কেনো খুন করতে চান?”

“ব্যাপারটা পারসোনাল।”

“হুমমম স্ত্রী ঘটিত ব্যাপার যেহেতু পারসোনাল তো হবেই। তবে আমি সবই জানি। আপনার বন্ধু আলম সাহেব আমাকে সবই বলেছেন। আপনি আমার রেট জানেন তো?

“হুমমম।”

“তাহলে ওই ব্যাপারে আর কোনো ঝামেলা নেই কি বলেন?

“না ঠিক আছে।”

“গুড। তো ডিল ফাইনাল?

“হ্যা।”

“কাজের কথা হলো। এবার আমি আপনাকে একটা গল্প শোনাই। আচ্ছা বলুন তো পরকীয়া মানুষ কাদের সাথে করে?”

“সরি, আমার কোনো ধারণা নেই?

“আপনার স্ত্রী কার সাথে পরকীয়া করছে আপনি জানেন?

“নাহ, আমার কোনো ধারণা নেই, মাহবুব সাহেব আবারো একই কথা রিপিট করলেন। কোথায় যেনো শুনেছিলেন মানুষ নার্ভাস হলে নাকি একই কথা বারবার রিপিট করে। আর উনি এখন চূড়ান্ত নার্ভাস। তবে তার কোনো ধারণাই নেই নার্ভাসনেসের শুরু হলো মাত্র।

“আমার আছে। পুরুষ হোক বা স্ত্রী, পরকীয়া করে মানুষ তার সবচেয়ে কাছে লোকদের সাথে। আপনার সবচেয়ে কাছের লোক কে? মি. মাহবুব?

“আমার আমার…”

“আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধু?”

“আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু?…আমার…আ ল…অসম্ভব।”

“সত্য কল্পনার চেয়েও অদ্ভুত মি. মাহবুব। আলম। আপনার স্ত্রী পরকীয়া করে আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু আলমের সাথে।”

“অসম্ভব। আমি বিশ্বাস করি না। কী প্রমাণ আছে আপনার কাছে?”

“প্রমাণ! আপনি প্রমাণ চাইছেন আমার কাছে। আমি আপনাকে প্রমাণ একটু আগে দেখালাম না, ঢাকনাটার নিচে!”

“মানে?”

“মানে খুব সহজ স্যার। আপনার বন্ধু আলম আমাকে এখানে আপনার সাথে ডিল করতে পাঠান নি। উনি আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন আপনাকে খুন করতে।”

মাহবুব সাহেবের মনে হলো উনি সাথে সাথে দশ হাজার ভোল্টের ধাক্কা খেলেন।

“আম…আমি…আপনি…আমাকে…”

“জ্বি স্যার, আমি এখানে এসেছি আপনাকে খুন করতে আপনার সাথে খুনের ডিল করতে নয়।”

মি. মাহবুব আবারো মুখ খুললেন কিন্তু কোনো কথা বেরুলো না। একবার ভাবলেন চিৎকার করবেন কিন্তু আওয়াজ বেরুলো না।

“শান্ত হোন মাহবুব সাহেব। এই পানিটা খান আর টিসু দিয়ে মুখটা মুছুন। তারপর আমার একটা ছোট্ট প্রশ্নের উত্তর দিন।”

মি. মাহবুব যন্ত্রচালিতের মতো তাই করলেন।

“ভেরি গুড। এবার আমাকে বলুন, যদি আমি আপনাকে খুনই করতে এসে থাকি তবে সেটা না করে আপনার সাথে বসে খোস গল্প করছি কেনো? আর আপনাকেই বা এতো কিছু বলছি কেনো?”

মাহববু সাহেব শুধু বোকার মতো মাথা নাড়লেন।

“কী ভাবছেন? জনবহুল রেস্তোরা। আশেপাশে অনেক লোক তাই। উহুহু ভুল। আমি প্রায়সময়ই আমার ভিকটিমদেরকে জনবহুল জায়গাতেই খুন করি। এটাই আমার কাজের ধরণ। আমি আপনাকে খুন করতে চাইলে এর মধ্যেই সেটা করে ফেলতে পারতাম। আপনি নিজেই তো দেখেছেন আমার পিস্তলে সাইলেন্সার আছে। এটা দিয়ে গুলি করলে কেউ কিছু টের পাবার আগেই আমি সটকে পড়তে পারতাম। অথবা আমি আপনার প্লেটে যে চিংড়িটা তুলে দিলাম সেটাতে একটু সায়নাইড মিশিয়ে দিলে…অথবা…। যাই হোক আমি যদি আপনাকে মারতে চাইতাম তাহলে আরো অন্তত কয়েকটা উপায়ে এরইমধ্যে মেরে ফেলতে পারতাম।।”

“কিন্তু আপনাকে তো সবাই…”

“দেখেছে তাইনা? মানে আমার চেহারা দেখেছে। পুলিশ ইনভেস্টিগেশন হলে সবাই আমার বর্ণনা দিতে পারবে। মি. মাহবুব আপনি কি করে ভাবলেন এটা আমার আসল চেহারা। আমি জনবহুল একটা জায়গায় খুন করতে আসবো আর ছদ্মবেশ নেবো না তা কি হয়।”

“আপনি আপনি কী চান?

“এই তো এতোক্ষণে লাইনে এসেছেন। আমি ভাবছিলাম আপনি কী ক’রে এতো টাকার মালিক হলেন? এই বুদ্ধি আর সাহস নিয়ে? যদিও খুব স্বল্প তবুও এতোক্ষণে আপনার বুদ্ধি এবং লিডারশিপ কোয়ালিটি দেখতি পাচ্ছি আমি।”

“আপনি কী চান?

“ওকে, ওকে স্যার। উত্তরটা খুব সহজ। টাকা। মি. আলম আপনাকে মারার জন্যে আমাকে পঞ্চাশ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। আমি আপনাকে এখান থেকে জিবীত বের হয়ে যাবার জন্যে এক কোটি অফার করছি। এইখানে এইমুহূর্তে আপনি আমাকে এক কোটি টাকা দিবেন। এখান থেকে জিবীত বেরিয়ে যাবেন।”

“কিন্তু কিন্তু আমি এখানে টাকা পাবো কোথায়?

“খুব সহজ মি. মাহবুব। আপনি আপনার সেক্রেটারি…কী যেনো নাম? হ্যা জেনিকে ফোন করুন। আমি জানি আপনার অফিসের সেফেই এর চেয়ে বেশি টাকা থাকে। তাকে আপনার লকারের নম্বর দিন। পুরো এককোটি টাকা নিয়ে এখানে আসতে বলুন। আপনার অফিসের দূরত্ব এখান থেকে পনেরো মিনিট। আমি আপনাকে আধা ঘন্টা সময় দিচ্ছি। কল হার নাউ।”

“আপনি আমার অফিস সেফ, এসব ব্যাপারে এতো কিছু কিভাবে জানলেন?”

“অবান্তর প্রশ্ন। যেটা বললাম সেটা করুন।”

মি. মাহবুব একবার চারপাশে তাকালেন তারপর ঢাকনাটার দিকে তাকালেন।

“কী ভাবছেন? আমি ওটার ভেতর থেকে পিস্তলটা বের করতে করতে লোক ডেকে জড়ো করবেন। আপনার জ্ঞতার্থে জানাচ্ছি পিস্তলটা এখন আর ওটার নিচে নেই। ওটা এখন আমার হাতে এই যে দেখুন, বলে সে ন্যাপকিনের নিচে পিস্তলটার নল নেড়ে দেখালো।

“কাম অন ইউ ফাক, কল হার নাউ। মাদারচোত আর একসেকেন্ড দেরি করবি তো তোর কলিজা বরাবর দুপ দুপ দুইটা গুলি…আর…”

“করছি করছি…”

 

আধ ঘন্টা পর…

“আপনার সেক্রেটারি ব্যাগ হাতে ঢুকছে। তাকে সুন্দর করে বসতে বলবেন। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবেন। তারপর ব্যাাগটা আমাকে দিতে বলবেন। আমি বেরিয়ে যাবার আধ ঘন্টার ভেতর যদি এখান থেকে বের হন বা কাউকে কল করেন…ইউ উইল ফাক ইউর ওউন লাইফ। আর হ্যা আজকের পর এই ঘটনা সম্পূর্ণ ভুলে যাবেন। আর যদি মনে রাখার চেষ্টা করেন তাহলে আমাদের আবার দেখা হবে…।”

“আমি আমি কাউকে বলবো না।”

“ভেরি গুড…জেনি এসে গেছে, নরমাল হ গাধার বাচ্চা।”

“হ্যালো জেনি।”

“হ্যালো স্যার।”

মি. মাহবুবের সুন্দরি সেক্রেটারি জেনি শরীরে ঢেউ তুলে বসে পড়লো। পাশের চেয়ারে রাখলো ভারি ব্যাগটা।

“মিস. জেনি উনি আমার ক্লায়েন্ট…মি. মি.”

“আফতাব…আফতাব চৌধুরি, নাইস টু মিট ইউ মিস।”

“মি টু স্যার।”

“মি মাহবুব তাহলে আমি আজ আসি।”

“হ্যা শিওর, জেনি উনাকে ব্যাগটা…”

“হ্যা স্যার।”

“গুড বাই মি. মাহবুব।”

লোকটা ব্যাগটা হাতে নিয়ে মৃদু একটা হাসি দিয়ে বেরিয়ে যেতে জেনি মাহবুব সাহেবের দিকে ফিরে বললো, “স্যার ওনাকে তো এর আগে…স্যার আপনি কি অসুস্থ?”

বলতে বলতে মাহবুব সাহেব চেয়ার থেকে গড়িয়ে পড়ে গেলেন।

“স্যার স্যার?

মি. মাহবুবের চোখে মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে তার জ্ঞান ফেরানোর পর উনি অফিসে ফিরে আসেন। মিস জেনির অনেক প্রশ্নের সামনেও একদম চুপ ছিলেন তিনি। অনেকক্ষণ হতবুদ্ধি হয়ে অফিসরুমে বসে হয়ে থাকার পর একবার সেফটা দেখলেন। যেহেতু জেনিকে আজ কোডটা বলেছেন তাই ওটার কোড চেঞ্জ করতে হবে। যে পরিমাণ টাকা ওখান থেকে আজ গেছে তার প্রায় ডাবল টাকা এখনো ওখানে আছে। কিন্তু টাকা যা গেছে সেটা ব্যাপার না। ব্যাপার হলো উনি এখনো মানসিক ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারছেন না। মোবাইলটা বের করলেন। মোবাইলটা হাতে ধরে বসে আছেন। কাকে বিশ্বাস করবেন আর কাকে কল করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। হঠাৎ আলমের মেসেজ আসতে শুরু করলো।

ব্যাপার কি! মাহবুব সাহেব মনে মনে ভাবলেন। এর মধ্যে আলমের একটা মেসেজ পড়ে চমকে উঠলেন,

‘কি ব্যাপার, তোমাকে কাল থেকে ট্রাই করছি মোবাইলে। তুমি কোথায়?

 সাথে সাথে উনি কল ব্যাক করলেন।

“হ্যালো।”

“কি ব্যাপার? তোমার মোবাইলে কী হয়েছিলো? কাল থেকে ট্রাই করছি পাচ্ছি না?

“কেনো? কোন ব্যাপারে?

“কোন ব্যাপারে মানে? ওই ব্যাপারটা নিয়ে তোমার সাথে কথা হয়েছিলো না। সেই লোকটার সাথে দেখা করবে না তুমি? তোমার সাথে কথা না বলে আমি তাকে কী জানাবো? এখন বলো কবে দেখা করবা?

“মানে?

“মানে ওই খুনির ব্যাপারটা গাধা।”

“কি বলছো? তাহলে আমি আজকে কার সাথে দেখা করলাম?

 

 

 

সেদিন বিকেলে অন্য কোনো রেস্তোরায়

বনানীর একটা রুফটপ রেস্তোরা। ছেলেটা কোকের গøাসে মৃদু চুমুক দিচ্ছে আর ঘড়ি দেখছে। যথারিতী সময়ের চেয়ে আধাঘন্টা লেট ক’রে এলো তার গেস্ট।

“তোমার কি সময় জ্ঞান কোনোদিন হবে না?

মেয়েটা চেয়ারে বসতে বসতে একবার মুখ ঝামটা দিয়ে বললো, “ইসসস তুমি এতো সময়জ্ঞান দিয়ে করলেটা কী?

“মিস জেনি, মুখ সামলে কথা বলো, কী করলাম মানে, আজ সকালে আমি এক কোটি টাকা কামাই করেছি।”

“সেটাও তো আমার কারণেই। নিজেতো ওই পচা থিয়েটারে অভিনয় করতে করতে জীবন পার করার কথা ভাবছিলে।”

“হুমমম। এখন তো আর কোনো সমস্যাই নেই। ভাগ্যিস ওই দিন তোমার বস তার বন্ধুর সাথে খুনের প্ল্যান করার সময় ভুল করে ইন্টারকমটা খোলা রেখেছিলো। তুমি সব শুনলে আর…

“আর আমরা… দুজনেই একসাথে হেসে উঠলো।

“বাই দ্য ওয়ে তোমার ওই মোবাইল কম্পানির ফ্রেন্ডকে বলেছো, আলম সাহেবের নম্বরটা তোমার বসের নম্বরে আর বøক করে রাখার দরকার নেই।”

“হ্যা ওখান থেকে বেরিয়ে আসার একটু পরেই ওটা ঠিক করতে বলে দিয়েছি। আমার দোস্ত বিরাট একটা উপকার করলো। আলমের নম্বরটা মি. মাহবুবের নম্বরে বøক করে না রাখলে আমাদের প্ল্যানটা কার্যকর করতে পারতাম না। ওকে বেশ কিছু টাকা দিতে হবে। বেচারা চাকরির রিস্ক নিয়ে উপকারটা করেছে।

“তবে আজ সকালে তোমার ছদ্মবেশটা ভালোই হয়েছিলো।”

“হবে না মানে আমাদের থিয়েটারের সবচেয়ে এক্সপার্টকে দিয়ে মেকআপ করিয়েছিলাম।”

“আচ্ছা এতো সুন্দর খেলনা পিস্তল কই পেলে?

“কিসের খেলনা! ওইটা আসল জিনিস। সব কিছু ভূয়া হলে কি আর হয়। এক নেতা বন্ধুর কাছে থেকে ম্যানেজ করেছিলাম। তবে ওটাতে গুলি ছিলো না।”

“হুমমম বুঝলাম। তো এখন প্ল্যান কি? আমি কি চাকরিটা ছেড়ে দিবো?

“না, এখনি না। এখন চাকরি ছাড়লে তোমার বস সন্দেহ করতে পারে। অন্তত আরো একটা মাস চাকরি করবে। তারপর একটা এক্সকিউজ দেখিয়ে ছেড়ে দিবে। এর মধ্যে আমি একটু গুছিয়ে নেই।”

“আহহহ এক কোটি টাকা।”

“খুব বেশি না, তবে ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট, একটা গাড়ি আর চলার মতো ব্যাঙ্ক ক্যাশের জন্যে এনাফ। তোমার বস আজকে যা ভয় পেয়েছিলো না। হা হা।”

“আমি জানতাম পাবে। তাইতো প্ল্যানটা করার সাহস দেখিয়েছি। আসলে আক্রামপুরের লোকজন এমনই হয়, এরা ব্যবসা ছাড়া দুনিয়ার অন্যকিছু বোঝে না। এইযে দেখো আমাদের তথাকতিত সুপারস্টার জ্বলন্ত খলিল, লোকটা কতো টাকার মালিক অথচ দেশের সবার কাছে একটা কমেডিয়ান। আমার বসও এমন। তাকে দুই বছর ধরে চিনি। লোকটা শ্বশুর বাড়ির টাকায় বড়লোক হয়েছে তো, সাহস বলতে কিচ্ছু নেই। যাক তোমার থিয়েটারের বিদ্যেটা এবার অন্তত কাজে দিলো।”

“দেখো আমার অভিনয় নিয়ে একদম বাজে কথা বলবে না।”

ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর দুজনের ধ্যান ভাঙালো ওয়েটার, “স্যার আপনাদের অর্ডার।”

অর্ডার নিয়ে ওয়েটার চলে যাবার পর জেনি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো, “তুমি দিন দিন খাদক হয়ে যাচ্ছো।”

“মানে?

“ওই যে আমার একটা মাথামোটা ফ্রেন্ড আছে না, খালি খায় আর খায়। ওর মতো।”

“আস্তে… আমি একজন কোটিপতি মানুষ। আমাকে যার তার সাথে তুলনা করবে না বললাম। শোনো এইবারের খেলায় হাটর্সের কুইন বাজি জিতে গেলো ঠিকই কিন্তু মনে রেখো কিঙের খেলা এখনো বাকি।”

“তাই নাকি! হা হা।”

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

bn_BDBN